স্বদেশ ডেস্ক:
আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের সন্নিকটে অবস্থিত মরিশাসে গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে ভারত। এটি মূলত ভারতীয় সেনাদের জন্য একটি নির্মাণাধীন সামরিক ঘাঁটি। ভারত সরকার সেখানে গোপনে নৌ-ঘাঁটি তৈরি করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মরিশাসের আগালেগা দ্বীপে তিনশ বা তার কিছু কম-বেশি মানুষের বসবাস। ফ্রান্সো পৌলে নামে এক ব্যক্তি এই দ্বীপের বাসিন্দা। তিনি আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা একটি বিমানবন্দর আর হাসপাতাল চেয়েছিলাম। কিন্তু এত বড় বিমানবন্দর আমরা চাইনি। এই বিমানবন্দর দেখলে আমরা শঙ্কিত হই।’ আগালেগার বাসিন্দারা এখন এই ভেবে আতঙ্কিত যে, সেখানে ভারতীয় সেনারা ঘাঁটি গাড়লে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা দেখেছে কী করে গত দুই বছর ধরে তিন কিলোমিটারের একটি রানওয়ে নির্মাণ করেছে ভারত। একই সঙ্গে তারা সেখানে বেশ বড়সড় দুইটি জেটির নকশাও তৈরি করেছে। যা মূলত সামরিক কাজে ব্যবহার করা হবে।
সামরিক বিশ্লেষকেরা তাদের অনুসন্ধানী তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে দাবি করেছে আল-জাজিরা। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দ্বীপটি সম্ভবত ভারতীয় নৌবাহিনী সামুদ্রিক গোয়েন্দা এবং শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারির কাজে ব্যবহার করবে।
২০১৮ সালের দিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভারতের এই গোপন সামরিক ঘাঁটির বিষয়ে খবর বের হয়। কিন্তু মরিশাস ও ভারত দুই দেশের পক্ষ থেকেই এই নির্মাণ প্রকল্প সামরিক কাজে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। দুই দেশ তখন দাবি করেছিল এসব অবকাঠামো সেখানকার বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য নির্মাণ হচ্ছে।
যদিও দুই দেশের আনুষ্ঠানিক এই বক্তব্য কোনোমতেই বিশ্বাস করছেন না আগালেগার বাসিন্দারা। যাদের প্রধান জীবিকা মাছ শিকার ও নারকেল চাষ করা। তাদের ভাষ্যমতে, আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্প তাদের জন্য, এটা তারা বিশ্বাস করে না।
আগালেগার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন তাদের পরিণতি হবে ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের মতো। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা যেটি আমেরিকাকে লিজ দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের দিকে সেটিকে নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্র। একসময় সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে সেখানে মার্কিন সাবমেরিন ইউনিট ও বোমারু বিমানের ১৫টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের গবেষক স্যামুয়েল বেশফিল্ড বলেন, আগালেগায়ও গার্সিয়ার মতো ঘটনা ঘটবে। তবে তিনি মনে করেন, মরিশাস তাদের দ্বীপের সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা ভারতের কাছে দিয়ে দেবে না। এদিকে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে, দ্বীপের বাসিন্দাদের বিতাড়িত করা হবে না। তারা এখনো সেখানে থাকতে পারবেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ভারত ও মরিশাসের মধ্যে আগালেগার উন্নয়নের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল।